নারীদের ধর্মীয় ও মানসিক স্বাস্থ্যে

ইসলাম

নারীদের ধর্মীয় ও মানসিক স্বাস্থ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাব

দৈনিক ৩ বিলিয়ন মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে লগইন করে থাকে। জ্বি, ঠিকই পড়ছেন, ৩ বিলিয়ন মানুষ! এই পরিপ্রেক্ষিতে বিচার করতে গেলে বিশ্বের জনবসতির ৪০% মানুষ অর্থাৎ, প্রায় অর্ধেক দুনিয়াবাসী দৈনিক এই মাধ্যমগুলোতে বিচরণ করে চলেছে।

সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে দেখা যায়, সামাজিক যোগোযোগ মাধ্যমগুলো বিশেষত স্ন্যাপচ্যাট, ইন্সটাগ্রাম, পিনটারেস্ট এবং ফেসবুক ব্যবহারে এগিয়ে রয়েছে নারীরা।

সুতরাং নারী হিসেবে প্রতিনিয়ত হরেক রকমের বিষয়বস্তু আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে এবং আমাদের মস্তিষ্ক এই তথ্যগুলো ঠিক কীভাবে গ্রহণ করছে সেটা আমরা জানি না।https://www.muslimmedia.info/2019/12/15/effect-of-social-media-on-womens-religious-and-mental-health

এই সংস্কৃতির সাথে ‘প্রভাবককে’ যোগ করুন তা হলেই বিপর্যয়ের প্রণালী পাবে ষোলকলা পূর্ণতা।

নারীদের ধর্মীয় ও মানসিক স্বাস্থ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাব

“দেখেছেন ভাবি, ছুটি কাটাতে উনারা কোথায় গিয়েছিল? মেয়েটার স্বামী কি তাঁকে ট্রেন্ডি ব্যাগ এনে দিয়েছে? বাহ তাঁর বাড়িটা কি সুন্দর, আমার বাড়ির বসার ঘরটাও নতুন করে সাজাতে হবে! ইশ্‌ । আমি কি মোটা, দেখুন তাঁকে কি সুন্দর দেখাচ্ছে!”

আপনি যখন সরল মনে নিউজফিড স্ক্রোল করবেন তখন এ ধরনের কিছু চিন্তা আপনার মাথায় এসে যেতেই পারে।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা সামাজিক মাধ্যমের প্রভাবকগুলোর অন্ধ অনুসরণ করে যাই। কিন্তু এই প্রভাবকের ঘটনাগুলো আমাদের ধর্মীয় ও মানসিক স্বাস্থ্যকে কতটা আলোড়িত করছে সে বিষয়ে কি আমরা অবগত?

নারীদের ধর্মীয় ও মানসিক স্বাস্থ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাব

বুঝলাম, কিন্তু বৈজ্ঞানিক প্রমাণাদি কিন্তু অন্য কথা কথা বলছে। গবেষণায় দেখা গেছে, কমবয়সী নারীদের শরীরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর বিরূপ প্রতিক্রিয়া রয়েছে। শুধু তা-ই নয় বয়স্ক মহিলারা যখন বাকিদের ইন্সটাময় জীবনের জাঁকজমক ও অগ্রগতির সাথে নিজেকে তুলনা করেন তখন নিজেদের মাঝে এক ধরনের অভাববোধ করেন।https://islamicjourneyblog.com/wp-admin/post-new.php

এই সমস্যাগুলো নিরসনের জন্যে সাইকোলোজিস্টগণ আপনাকে এমন কিছু অনুসরণ করতে বারণ করবেন যেগুলো দেখলে আপনার মন খারাপ হয়।

কিন্তু এর সমাধান কি শুধু এতটুকুই?

মনে রাখতে হবে, আমরা স্ন্যাপচ্যাটে আমরা শুধু আমাদের খুশির মুহূর্তগুলোই মানুষের সামনে তুলে ধরি। অথচ আমাদের সমস্ত সমস্যা সংক্রান্ত ঘটনাগুলো কিন্ত পর্দার আড়ালেই রয়ে যায়

সামাজিক মাধ্যমগুলোতে কিছু কিছু দম্পতিরা এমনভাবে নিজেদের তুলে ধরেন যেন তারা খুব সুখে দিন পার করছেন অথচ প্রকৃতপক্ষে অধিকাংশক্ষেত্রেই তাদের জীবনগুলো হয় বিপর্যস্ত।

নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করার বিষয়টি অসংখ্যবার কুর’আন, হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে।

আর তোমরা এমন কিছুর আকাঙ্ক্ষা করো না, যেগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ তোমাদের একজনকে অপরজনের ওপরে প্রাধান্য দিয়েছেন। [ সূরা আন-নিসা: (৩২)]

আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেন,

কেবল দুটি বিষয়ে ঈর্ষা করা বৈধ। এক-সে ব্যক্তির ওপর যাকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন অতঃপর তাঁকে বৈধ পন্থায় অকাতরে ব্যয় করার ক্ষমতা দিয়েছেন। আর দুই- সে ব্যক্তির ওপর যাকে আল্লাহ তায়ালা প্রজ্ঞা দান করেছেন অতঃপর সে তাঁর মাধ্যমে বিচার ফয়সালা করে ও তা অন্যকে শিক্ষা দেয়।

এখন আসুন আমাদের নিউজফিডের কথা চিন্তা করি।

নারীদের ধর্মীয় ও মানসিক স্বাস্থ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাব

গোটা পঞ্চাশেক বাড়ি পুনঃসংস্কারের অ্যাকাউন্ট দেখার আসলেই কি কোনো প্রয়োজনীয়তা রয়েছে? একগাদা গরমের কাপড়ের বিজ্ঞাপন কি আসলেই আমাদের কোনো উপকারে আসছে? যে মানুষটিকে আপনি বাস্তব জীবনে চেনেন পর্যন্ত না তার বাড়ি, স্বামী বা বাচ্চা দেখতে কেমন সেটা জানা কি আপনার জন্যে খুব জরুরি?

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,

ইসলামের পরিপূর্ণতার একটি অংশ হলো, যে বিষয়টি না জানলেও চলে সেগুলো নিয়ে মাথা না ঘামানো।

সামাজিক মাধ্যমগুলোর সবচেয়ে ভয়াবহ দিকটি হলো এগুলো আমাদের অন্তরকে দুনিয়াবি বিষয়বস্তুর সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে যুক্ত রেখেছে। এফওএমও এর অসংযত আর নিত্যদিনের বাহারি ঘটনা দেখে ভাবতে থাকি, এগুলোর সাথে যুক্ত না থাকলে তো এত কিছু জানাই হতো না! এ বিষয়ে আল্লাহ বলেছেন-

বরং তোমরা দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দিচ্ছ। অথচ আখিরাত সর্বোত্তম ও স্থায়ী। [সূরা আল-আ’লা: (১৬-১৭)]

সুতরাং  সামাজিক মাধ্যমে কারও বন্ধু হওয়ার আগে বা কাউকে অনুসরণ করার আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন, “এই মানুষটি আমাকে নিজের সম্পর্কে কেমন চিন্তা করাবে? আর এই মানুষটি কি আমার ধর্মচর্চায় কোনো উপকারে আসবে?” নাহয় পরে আফসোস করতে হবে, যেমনটা কুরআনে বলা হয়েছে-

নারীদের ধর্মীয় ও মানসিক স্বাস্থ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাব

হায় আমার দুর্ভোগ, আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম! [সূরা আল-ফুরকান: (২৮)]

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন

মানুষ তাঁর বন্ধুর ধর্মের অনুসরণ করে। এ কারণে তোমরা বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সতর্ক হও। (হাসান)